আসমাকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের একটি পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে তরুণী আসমা আক্তার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন যুবক মারুফ হাসান বাঁধনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই বাঁধনের সঙ্গেই আসমা আক্তার ট্রেনে করে ঢাকায় আসে। পরে তার লাশ উদ্ধার হয়।

বাঁধন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, প্রেমের সূত্র ধরে আসমাকে নিয়ে সে গত ১৮ আগস্ট ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ ট্রেনে করে গভীর রাতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে

স্টেশনে পৌঁছে। সেখানে রাতের খাবার গ্রহণ করার পর তারা স্টেশনের আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোয় থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিচয়পত্র না থাকায় এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কেউ তাদের হোটেলে থাকতে দেয়নি। পরে বাঁধন ও আসমা বলাকা কমিউটারের একটি পরিত্যক্ত বগিতে উঠে শুয়ে পড়ে। এ সময় তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে অপরিচিত চার যুবক। পরে বাঁধনকে পাশের বাগিতে নিয়ে বেঁধে রেখে আসমাকে ধর্ষণ করে এক পর্যায়ে শ^াসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা। পরে বাঁধনও সেখান থেকে পালিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হয়। বাঁধনকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কমলাপুর জিআরপি থানা পুুলিশের কাছে হস্তান্তর করে পঞ্চগড় থানা পুলিশ।

কমলাপুর জিআরপি থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলী আকবরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোর্য়াটার) নাঈমুল হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় ও পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু আককাছ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

কমলাপুর জিআরপি থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাঁধনের বক্তব্য সঠিক হতে পারে। আবার সে-ই পরিকল্পিতভাবে আসমাকে হত্যা করতে পারে। তবে বাঁধনের স্বীকারোক্তি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’

বাঁধনের পরিবারের লোকজন বাঁধনকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করায়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পঞ্চগড় থানা হাজতে রাখে।

বাঁধনের চাচা ফারুক হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড় থানা চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা নিজেরাই বাঁধনকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাই।’

বাঁধনের মা বিলকিস বেগম বলেন, বাঁধন নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। বাঁধনের সঙ্গে ওই চার যুবকের যোগসূত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী বলেন, বাঁধনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ হয় আদালতে, পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের কোনো সুযোগ নেই। তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনা এবং মামলা কমলাপুর রেলওয়ে হওয়ায় মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা তেমন কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।

পঞ্চগড় থানায় গণমাধ্যমকর্মীদের বাঁধনের ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বাঁধনকে জিআরপি পুলিশ নিয়ে যায়।

এদিকে আসমা আক্তারকে ধর্ষণ, নৃসংশভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ‘বাঁচাও পঞ্চগড়’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।

পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে আসমা খাতুনের বাবা-মা, চাচাসহ পরিবারের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।

আসমার বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমার মেয়ের মতো যেন আর কারও সন্তানের এমন না হয়। এ জন্য আমি মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

আপনি আরও পড়তে পারেন